বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫, ১০:২৮ পূর্বাহ্ন
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি::
রাজশাহীর বাঘায় বেসরকারি এক ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকের অবহেলায় তার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। অস্ত্রপচারের পর সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন নবজাতকের মা প্রসূতি আন্নিকা (২০)। মিন্টু প্রামানিক স্ত্রী আন্নিকা উপজেলার ফতেপুর বাউসা গ্রামের বাসিন্দা।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে উপজেলা সদরে সেবা ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
প্রসুতির স্বামী (মিন্টু প্রামানিক) নিজ গ্রামের বাইরে থাকার সুবাদে তাকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করেণ আত্মীয়রা। তবে প্রসব ব্যথা শুরুর আগেই তাকে ভর্তি করা হয়। ক্লিনিকের রীতি অনুযায়ী তাকে সিজারের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। নিহত নবজাতককে রাতেই নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে জানান প্রসুতির মামা নাসির উদ্দীন। রোববার সকালে এ ঘটনা জানাজানি হলে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
নবজাতকের নানী কাজলি বেগম জানান, মেয়ে আন্নিকাকে শনিবার রাত ৭টায় উপজেলার সদর এলাকায় অবস্থিত সেবা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর ক্লিনিকের চিকিৎসক জরুরি ভিত্তিতে মেয়েকে অস্ত্রপচার (সিজার) করেন। অস্ত্রপচারের পর পরই নবজাতকের মৃত্যু হয়। ডাক্তার, কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও ক্লিনিকের অব্যস্থাপনার কারণে নবজাতক মারা গেছে। বর্তমানে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন প্রসূতি আন্নিকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশেষজ্ঞ সার্জন কিংবা অজ্ঞানের চিকিৎসক ছাড়াই ওই নারির অপারেশন করা হয়। আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট অনুযায়ী তার ডেলিভারির তারিখ ছিল ২৭ অক্টোবর। প্রসুতি আন্নিকা জানান, অপারেশনের আগে তার পেটে বাচ্চা নড়াচড়া করছিল।
চিকিৎসক সহিদুল ইসলাম রবিন জানান, রোগীর অনুরোধে নির্ধারিত তারিখের আগেই অপরারেশন করতে বাধ্য হই। অপারেশনের পর নবজাতকে মৃত পাওয়া গেছে। পরে প্রসুতির টিউমার অপারেশন করেছেন। তবে অজ্ঞানের কোন চিকিৎসক ছিলনা বলে স্বীকার করেছেন তিনি। এক সপ্তাহ আগে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে যোগদান করেছেন বলে জানান এই চিকিৎসক। ক্লিনিকের স্বত্তাধিকারি নাজমুল ইসলাম মুকুল বলেন, চিকিৎসকরাই জানেন কিভাবে নবজাতক মারা গেছে। তবে তার ক্লিনিকে নিয়মিত কোন চিকিৎসক নেই বলে স্বীকার করেছেন। ওসি নজরুল ইসলাম জানান, নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন,বিষয়টি সিভিল সার্জনকে অবগত করবেন।
এদিকে বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসকের অবহেলা আর ক্লিনিকের অব্যবস্থাপণায় লাশের মিছিল বেড়েই যাচ্ছে। এতিম হচ্ছে অবুঝ শিশু আর মায়ের কোল খালি করে বিদায নিচ্ছে নবজাতক। ইতিপূর্বে একাধিকবার ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা দিতে হয়েছে আলোচিত ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে। নিয়মিত চিকিৎসক ছাড়াই অপরিছন্ন পরিবেশে ক্লিনিক পরিচালনা করার অপরাধে ২০১৭ সালে ২ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহি অফিসার ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্রেট শাহীন রেজা সেবা ক্লিনিক এন্ড ডায়ানষ্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে বিশ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
উল্লেখ্য, আলোচিত চিকিৎসকদের এর ভুল চিকিৎসায় ২০১৭ সালের ১ নভেম্বর সেবা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মৃত্যু বরণ করেণ লালপুরের দুড়দুড়িয়া গ্রামের আলো খাতুন নামের এক প্রসুতি। অপারেশনের কয়েক ঘন্টা পর নবজাতককে রেখে মারা যান ওই নারি। বিশেষজ্ঞ সার্জন কিংবা অজ্ঞানের চিকিৎসক ছাড়াই ওই নারির অপারেশন করা হয়। ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর জননী ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের পর নবজাতক কণ্যা রেখে মৃত্যু বরন করেন প্রসুতি আজমিরা (২৫)।